আমীর হামজা :: নিয়াজ মাহমুদ। সাংবাদিক হিসেবে যেটুকু তার পরিচিতি তার চেয়ে বেশি পরিচিতি চাঁদাবাজ হিসেবে। নিয়াজ মাহমুদ পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ তালুকদার ওরফে মজিদ মোক্তারের পুত্র। তার এলাকার লোক তাকে চেনে ‘চিটার নিয়াজ’ নামে।
বর্তমানে ফ্রান্স প্রবাসী সাবেক এই যুবলীগ নেতা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আবারও মরিয়া হয়ে চাঁদাবাজিতে নেমেছে। বিএনপি নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের চরিত্র হনন করে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এছাড়া ব্ল্যাকমেইল করে ব্যবসায়ীসহ বিত্তশালীদের কাছ থেকে একইভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নিয়াজ।
নিয়াজ মাহমুদের সাথে পতিত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের রয়েছে ঘনিষ্ঠতা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার সূত্র বলছে, নিয়াজ মাহমুদ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এক সময় মানবজমিন পত্রিকার খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতো। খুলনা শহরের ছোট মির্জাপুর এলাকায় এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। খাট কেনারও সামর্থ্য না থাকায় ঘুমাতো ফ্লোরে। এরপর সম্পৃক্ত হয় যুবলীগের রাজনীতিতে। ধীরে ধীরে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের সঙ্গে গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠতা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
সাংবাদিকতার আড়ালে তার মূল লক্ষ্য ছিল চাঁদাবাজি। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ধনাড্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিউজ করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো কথিত সাংবাদিক নিয়াজ। এছাড়া শেখ সোহেলের কাছ থেকে নিয়েছে লাখ লাখ টাকার ঠিকাদারি কাজ। টাকা কামিয়েছে দুহাত ভরে। শেখ সোহেল তাকে একটি গাড়িও উপহার দেয়। হাতে কাঁচা টাকা আসার পর তখন অবিবাহিত নিয়াজ মাহমুদ প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তার বাসায় বসাতো মদের আসর। সেখানে থাকতো একাধিক কলগার্ল।
প্রতিনিয়ত তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে খুলনার মানুষ। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন ঝাড়ু মিছিল নিয়ে তার বাসা ঘেরাও করতে গেলে সুচতুর নিয়াজ কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। এরপর চলে যায় ঢাকায় এবং কাজ শুরু করে মানবজমিনের ঢাকা অফিসে। সেখানে গিয়েও শুরু করে চাঁদাবাজি। এই চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা কামানোর পর জনরোষ এড়াতে পাড়ি জমায় বিদেশে।
বিদেশে যেয়ে চালু করে ২টি অনলাইন পত্রিকা। অখ্যাত ওই অনলাইনে বিভিন্ন লোকের বিরুদ্ধে নিউজ করার ভয় দেখিয়ে বিদেশে বসেই কামাতে থাকে লাখ লাখ টাকা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অনেক ত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আবারও সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কথিত সাংবাদিক নিয়াজ মাহমুদ।
গত দুই সপ্তাহ ধরে খুলনা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে নিয়াজ মাহমুদ। যার কাছ থেকে চাঁদা পাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কোনো নিউজ করছে না। আর যে নেতা টাকা দিচ্ছে না তার বিরুদ্ধে মনগড়া নানা অভিযোগ তার অনলাইনে প্রকাশ করছে। এভাবে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মনগড়া কাল্পনিক তথ্য লিখে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যাতে তার চাঁদার রেট বাড়ে। তার এই ঘৃণ্য অপকর্মের শিকার হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তাও।
নিয়াজ মাহমুদের চাঁদাবাজির শিকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, সাবেক যুবলীগ নেতা নিয়াজ খুলনার শেখ বাড়ির দালাল এবং পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী। সে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে।
তারা জানান, তারা নিয়াজ মাহমুদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং মানহানির বিষয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া তাকে খুলনার মগজবন্ধকী যে ৩/৪ জন সাংবাদিক সহযোগিতা করছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি মামলা করা হবে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কথিত সাংবাদিক নিয়াজ মাহমুদের বিরুদ্ধে তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী এলাকায় তার আত্মীয়-স্বজন কে কে আছে এবং নিয়াজ মাহমুদ এখন কোথায় আছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। ছাত্র-জনতার অনেক ত্যাগের বিনিময়ে দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এখানে কাউকে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল, ধান্দাবাজি করতে দেয়া হবে না। বিদেশে থেকে সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করলেও পার পাবে না।
চলবে….